পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েচেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

 পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েচেন  প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

অধ্যাপক ইউনূসের মনে রাখা উচিত, যাঁরা তাঁর পক্ষে ‘পাঁচ বছরের জন্য চাই’ প্রচারণা চালিয়েছেন, তাঁরাই এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য দায়ী। অধ্যাপক ইউনূসের মাহাত্ম্য ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে নয়; বরং স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচিত সরকারের কাছে সফলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমেই প্রকাশ পেত।


বাংলাদেশের ইতিহাসে যেসব তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন করেছে, তারাই ইতিহাসে প্রশংসনীয় হয়ে রয়েছে। যাঁরা অনির্বাচিত সরকারকে দীর্ঘায়িত করতে চেষ্টা করেছেন, তাঁরা রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিজীবনেও শ্রদ্ধার জায়গা হারিয়েছেন।


আমরা আশা করেছিলাম, গণ-অভ্যুত্থানের কারণে অভূতপূর্বভাবে গঠিত এই সরকার জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও সুষ্ঠু বিচার শুরু করবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো চিহ্নিত করে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করে সংস্কারের পরিকল্পনা দেবে এবং একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে যেন নির্বাচিত সরকার ঐকমত্যের ভিত্তিতে নেওয়া সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে।


এর বিপরীতে আমরা খেয়াল করলাম, জুলাই হত্যাকাণ্ডের মূল কুশীলবরা পালিয়ে গেলেন, হত্যাকাণ্ডের বিচারে স্থবিরতা তৈরি হলো, ঢালাও হত্যা মামলা দেওয়া হলো এবং অপ্রয়োজনীয় ও কম গুরুত্বপূর্ণ গ্রেপ্তার করে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের গুরুত্বকে খাটো করা হলো।


‘মবতন্ত্র’ তৈরি করে দেশে অরাজকতা তৈরি করা হলো, বেশ কিছু মাজারে হামলা হলো, রাস্তাঘাটে নারীদের হেনস্তা করা হলো। গণ-অভ্যুত্থানের শিক্ষার্থী নেতা ও উপদেষ্টা পরিষদে থাকা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও সবার মুখে মুখে।


অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ রাজনৈতিক দলগুলোকে আমলে কম নিয়ে, নিজেরাই দেশের মূল সংস্কার করে ফেলবে এবং একলাফে রাষ্ট্রের কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসার ‘ইউটোপিয়ান’ ধারণায় বুঁদ হল। অপ্রয়োজনীয়ভাবে মানবিক করিডর দেওয়া, বন্দরের কাজে বিদেশি কোম্পানিকে নিয়ে আসা ইত্যাদি ‘গ্র্যান্ড স্কিম’–এর প্রতি আগ্রহ দেখা গেল।


সবচেয়ে বড় ভুলটি হচ্ছে, এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও সামরিক বাহিনী, যাদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সরকার গঠিত, তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো প্রয়োজন মনে করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। বরং একজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হলো, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। কারণ, বরাবরই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুটি প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার আওতাধীনই থাকে।


জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বিতর্কিত অবস্থান ও রাজনৈতিক, সামরিক শক্তির সঙ্গে আলোচনা না করার কারণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার দায়ভার ইউনূস সরকারের ওপরেই বর্তায়। তাই রাষ্ট্রীয় কাজে অসহযোগিতার অভিযোগ না তুলে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, কীভাবে তার জনভিত্তির উৎসগুলোর মতামতকে আমলে নিতে হয়, তা শেখা।


কোনো যদি-কিন্তু ছাড়া ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট তারিখ অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা করতে হবে। শিক্ষার্থী নেতৃত্বের উচিত মাটিতে নেমে আসা এবং বাস্তবতার সঙ্গে বোঝাপড়া করা। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ যাকে ভোট দেবে, সেই রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করবে। ‘বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাবে, তাই সেটি যেকোনোভাবে বন্ধ করতে হবে’ এটি কোনো যৌক্তিক চিন্তা নয়। বরং জামায়াত ও এনসিপির উচিত জনগণের কাছে যাওয়া এবং যতটা সম্ভব বেশি আসন পেয়ে বিএনপিকে মোকাবিলা করা।


কোনো আইন ও সংবিধানের মারপ্যাঁচের মাধ্যমে বিএনপিকে ঠেকানোর চেষ্টা কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না। ছাত্র নেতৃত্বের উচিত ‘ইউটিউবার’ বা ‘মবসৃষ্টিকারীদের’ সঙ্গে নয়, বরং বিএনপির সঙ্গে একটি রাজনৈতিক মিত্রতায় যাওয়া। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সেটিই এখন কাঙ্ক্ষিত ও এনসিপির রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য সেটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হবে।


ড. সাইমুম পারভেজ বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশেষ সহকারী


*মতামত লেখকের নিজস্ব



আরও পড়ুন

আগ্নেয়াস্ত্র

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার শর্ত কী, আসিফ মাহমুদ কীভাবে লাইসেন্স পেলেন

 নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। ১ জুলাই, ২০২৫ 

ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল সামনে রেখে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

‘গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার ঢাকায় বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে 

নিত্যনতুন ইস্যু আনতে থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পাবে: তারেক রহমান

জার্মানির হ্যানভার শহরে তীব্র গরমে একটি জলাশয়ের ধারে মানুষের ভিড় 

ইউরোপজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ, জার্মানিতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি


১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনের মুখে ডলার

Comments

Popular posts from this blog